২০১৮ সালের শিক্ষক সংসার চালাতে মুড়ি ঘুগনির দোকান চালাচ্ছেন। কোনো প্রতীকী আন্দোলন নয়,বাস্তব ছবি। ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের তালিকায় থাকা শিক্ষা কর্মী।স্কুলে কর্মরত ছিলেন স্বামী স্ত্রী। দুজনেই শিক্ষা কর্মী।চাকরি গেছে দুজনেরই। রোজগার সম্পুর্ন বন্ধ। ছেলে মেয়ের পড়াশোনাও প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশায় চপ শিল্পকেই আঁকড়ে ধরছেন মহিলা।

২৬ হাজারের সাথে ২০১৮ সালে মালদার রতুয়ার মনিপুরের সম্বলপুর অঞ্চল হাইস্কুলে নিয়োগ পান তনুশ্রী সাহা সিংহ।একই স্কুলে শিক্ষা কর্মী হিসেবে স্বামী বিজয় সিংহও নিয়োগ পান। কিন্তু ২৬ হাজারের সাথে এখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরি হারা। হাতে জমানো টাকাও শেষ। কাঁধে ঋণও রয়েছে।এই অবস্থায় সংসার চালানো দায়। ছেলে মেয়ে স্কুল পড়ুয়া। বন্ধ হওয়ার যোগার তাঁদের পড়াশোনাও। অনেকদিন বাড়ি থেকেই বেরোতে পারেন নি তাঁরা। বিভিন্ন কটাক্ষ শুনতে হয়েছে।চাকরি বাঁচাতে আন্দোলনের পথে নেমেও লাভ হয় নি।উল্টে খরচ বেড়েছে।নিজেরা মালদা শহরের গৌড় রোড এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেই বাড়ি ভাড়াও জোটাতে হয়। এই অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে জেলা তৃণমূল পার্টি অফিস থেকে ১০০ মিটারের মতো দূরে শহরের ব্যাস্ততম রথ বাড়ি এলাকায় রাস্তার ধারে ছোট্ট এক গুমটি ঘর ভাড়া করে দোকান করেছেন চপের।কখনো রাখেন মুড়ি ঘুগনি। আর দোকানে রেখেছেন চিপস,চানাচুর ইত্যাদি।তবে মূলত চপ।
এদিকে মায়ের সাহায্যে করতে ছুটির দিন হাত লাগাতে দোকানে আসে শহরের লোলিত মোহন হাই স্কুলের ছাত্র বিশাল সিংহও।এদিকে স্ত্রীর সাথে তারও চাকরি চলে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে বাবা বিজয় সিংহ এখন গাড়ি চালক।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং চালকরা জানাচ্ছেন, কি করবেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গেছে কিছু করে তো খেতে হবে।তাই চপ ঘুগনির দোকান খুলেছেন।আমরা নিয়মিত এখানে আসি খাওয়া দাওয়া করতে।
অন্যদিকে আবার এই নিয়ে রাজনৈতিক জল ঘোলা শুরু হয়েছে। শাসক বিরোধীদের মধ্যে দোষারোপ, পালটা দোষারোপের পালা।
বিশ্বজিৎ রায় বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন পড়াশুনা করার পর মুড়ি চপ বিক্রি করে তিন তালা বাড়ি করেছে, এটা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। এর আগে,মালদায় তারই জ্বলন্ত উদাহরণ এই ঘটনা। ২৬ হাজার চাকরি গেছে তার মধ্যে এই স্বামী স্ত্রী রয়েছে তারা এখন চপের দোকান করছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের ছেলের মেয়েরা বিদেশে পড়বে আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চপ মুড়ির দোকান করবে এটা কোন নিদান। আমরা এই ঘটনাকে ধিক্কার জানাই।
শুভময় বসু মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বলেন, প্রথম কথা জীবন ধারণ করার জন্য কোন কাজই ছোট নয়। অনেকে রাস্তায় বিরিয়ানির দোকান করেছে। আজকে তারা বড় বড় দোকান করেছে। কোন কাজই ছোট নয় যারা এই কাজকে ছোটভাবে দেখে আসলে অন্য অভাবে অর্থ আছে যাদের তারাই এইসব ভাবে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন সবাই স্বনির্ভর হতে। শুধুমাত্র এই ধরনের কটাক্ষ বিজেপি দলই করতে পারে।