কথায় বলে গোবরেও পদ্মফুল জন্মে – কথাটা ধ্রুব সত্য কিনা জানা নেই, তবে হতদরিদ্র দিনমজুরের ছেলের মাধ্যমিক পাসের মার্কশিটে জ্বল জ্বল করছে ৬৫৭ নম্বর ,যেটা দেখলে কথাটি ধ্রুব সত্য বলেও মনে হয়। কথা হচ্ছে তুফানগঞ্জ দুই ব্লকের শালবাড়ি এক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথম খন্ড বাঁশ রাজা এলাকার হতদরিদ্র দিনমজুরের ছেলে রাকেশ সরকারের। সে হরিরধাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে ছিল। ফলাফল প্রকাশে দেখা যায় তার মার্কশিটে জ্বলজ্বল করছে ৬৫৭ নম্বর। রাকেশের বাবা বিষ্ণুপদ সরকার হতদরিদ্র দিনমজুর। দিনমজুরি করে কোনমতে চলে সংসার। একটি মাত্র শোবার ঘরে বাবা মা সহ ছেলেমেয়েরা থাকেন। ঘরটি বহুদিনের পুরনো ,জীর্ণ হয়ে গেছে চালের টিন ।টিনের ফুটোয় প্লাস্টিক দেওয়া হয়েছে তবুও বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতরে পড়ে জল। সেই মুহূর্তে সকলে যেমন বৃষ্টির আমেজ কে সঙ্গে করে বেঘরে ঘুম দেন সেই সময় রাকেশের পরিবার জেগে থাকেন। বৃষ্টির জলে বই খাতা ভিজে যায় প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা করেন রাকেশ। একটি মাত্র শোবার ঘরে বেড়া ভাঙ্গা ছেলেকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারেন না বাবা-মা ।যেদিন বিষ্ণুপদবাবুর কাজ জোটে সেদিন হয়তো ভালো-মন্দ জোটে। এমতাবস্তায় পাঁচজন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতো রাকেশ তবে কেউই টাকা নিতো না। রাকেশ জানায় দিনে তিন-চার ঘন্টা করে পড়াশোনা করত সে। তবে যতটুকু পড়তো মনোযোগ সহকারেই পড়তো। আগামীতে যারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন তারা যেন প্রতিটি বিষয়ে খুটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে এবং শারীরিক ও মানসিক চাপ নেবার ক্ষমতা রাখে। আগামী দিনের রাকেশ ডিফেন্স একাডেমিতে ভর্তি হয়ে দেশ সেবা করতে চায়। রাকেশের সাফল্যে খুশি প্রতিবেশীরাও তারা জানান খুবই কষ্ট করে পড়াশোনা করে রাকেশ।। ঝড় বৃষ্টির সময় অন্যের ঘরে গিয়ে পড়াশোনা করে। ঠিকমত খাওয়া জোটেনা তবে এত কষ্টের মধ্যে ভালো কল করায় খুশি তারাও। ছেলের এই সাফল্যে খুশি হলেও কথা বলতে গিয়ে চোখে জল ছল ছল করে উঠছে বাবা বিষ্ণুপদ মন্ডলের। সামনের দিনে কিভাবে ছেলেকে পড়াবেন সেই চিন্তায় কুরে কুরে খাচ্ছে। কোন সহৃদয় ব্যক্তি বা সংগঠন তরফ থেকে কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত তাহলে হয়তো ছেলেকে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।
