বঞ্চিত চা শ্রমিকদের পিএফ সমস্যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংসদ, সরকারি দপ্তরে কাগজ ছুঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ মনোজ টিগ্গার। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা সোমবার চা শ্রমিকদের পিএফ (প্রভিডেন্ট ফান্ড) সংক্রান্ত বকেয়া নিয়ে জলপাইগুড়ির পিএফ দপ্তরে হাজির হন। বহুদিন ধরেই বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ জানিয়ে আসছেন, তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়মিতভাবে কেটে নেওয়া হলেও তা নির্দিষ্ট পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে না। ফলে অবসরের পর তাঁরা যে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সাংসদ পিএফ কমিশনারের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসেন। এক পর্যায়ে সাংসদ এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যে, তিনি এক কর্মীর টেবিলে কাগজপত্র ছুড়ে দিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমি বারবার এই দপ্তরে আসছি, কিন্তু কোনরকম অগ্রগতি নেই। একশ্রেণীর অসাধু চা বাগান মালিক শ্রমিকদের থেকে PF কেটে নিচ্ছেন, অথচ তা জমা দিচ্ছেন না। এরপর সেই মালিকরা বাগান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বা মালিকানা বদল হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা কোনোভাবে মেটানো হচ্ছে না।” সাংসদ আরও অভিযোগ করেন, “এই দুর্নীতির পেছনে কিছু অসাধু দপ্তরের কর্মচারী এবং দালালচক্র জড়িত। যখন সরাসরি শ্রমিকরা তাঁদের দাবি নিয়ে আসে, তখন কিছুই হয় না। অথচ দালালদের মাধ্যমে সেই দাবির নিষ্পত্তি দ্রুত হয়ে যায়। এটা কি স্বাভাবিক? এটা কি আইনের শাসনের মধ্যে পড়ে?” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই তিনি সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “যদি প্রমাণ পাই যে, এই দুর্নীতির সঙ্গে পিএফ অফিসের কোনও স্টাফ বা আধিকারিক যুক্ত রয়েছেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেও হুঁশিয়ারি দেন টিগ্গা। তিনি আরও বলেন, “চা শ্রমিকরা আমাদের সমাজের অন্যতম প্রান্তিক ও পরিশ্রমী শ্রেণী। তাঁদের জীবনভর কষ্টের মূল্য যেন অবসরকালে কিছুটা স্বস্তি আনে, সেই উদ্দেশ্যেই তো প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো ব্যবস্থা। অথচ সেই অর্থ যদি দালালচক্র বা দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের পকেটে চলে যায়, তবে সেটা শুধু আইনবিরুদ্ধ নয়, মানবিকতাকেও লজ্জিত করে। আমি প্রয়োজনে এই বিষয়ে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হব।” চা বাগান শ্রমিকদের পিএফ কেলেঙ্কারি নিয়ে এভাবে সাংসদের সরব হওয়া এবং পিএফ দপ্তরে গিয়ে সরাসরি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘটনা যথেষ্টই সাড়া ফেলেছে। আজকের এই ঘটনার পর কত দ্রুত তদন্ত শুরু হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।