ডাইনি অপবাদে প্রাণনাশের চেষ্টা—এবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নাজিরপুর পঞ্চায়েতের মহাসলি গ্রামে। বছর পঞ্চান্নর গরীব কৃষিশ্রমিক শুখলাল মার্ডি সম্প্রতি দাশুল আদিবাসী পাড়ায় কাজ করছিলেন। ২২ মে, ঐ এলাকায় এক যুবক তালগাছ থেকে পড়ে আহত হলে, তার পরিবার এক গুনীনের পরামর্শ নেয়। সেই গুনীন দাবি করেন, শুখলাল মার্ডি একজন “ডাইন”, এবং তিনি বাণ মেরে ঐ যুবককে ফেলে দিয়েছেন। এমনকি গ্রামে যত বিপদ হচ্ছে, তার জন্যও দায়ী শুখলাল।

এরপর ২৪ মে, শুখলালকে হঠাৎই তার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় দাশুল পাড়ার কিছু মানুষ। ‘বিচার’ করার নাম করে তাকে মারধর করা হয়। লাঠি ও লাথির আঘাতে তার মাথা ও বুকে গুরুতর চোট লাগে। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করেন। চারদিন চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়ে তিনি পতিরাম থানায় ১৪ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বর্তমানে শুখলাল মার্ডি প্রাণভয়ে ঘরবন্দি। কাজ বন্ধ, রোজগার বন্ধ—সামান্য চালডালেই চলছে কোনোমতে দিন। তিনি জানান, “আমি কিছুই করিনি। শুধু একজন গুনীন বলল, আমি ডাইন। তারপর আমাকে সবাই মিলে মেরেছে।” তার স্ত্রী লক্ষী সরেন বলেন, “টাকা শেষ, কাজ বন্ধ। এখন না খেয়ে মরতে হবে?”
এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে কুসংস্কারবিরোধী প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পতিরাম থানার ওসি জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে এবং শুখলালের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনা ফের প্রমাণ করে, কুসংস্কার কীভাবে নিরীহ মানুষের জীবনে নৃশংসতা বয়ে আনছে। সচেতনতা ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অন্ধকার দূর করা কঠিন।