DIGITAL BANGLA NEWS

আপনার এলাকার খবর

ট্রেনের কামরায় সন্তান প্রসব, আলিপুরদুয়ারে নবজাতক ও মাকে সহযোগিতা রেল দপ্তরের

ট্রেনের কামরায় সন্তান প্রসব করলেন এক মহিলা, নবজাতক শিশু ও মা’কে সহযোগিতার হাত রেল দপ্তরের।
বুধবার ঘটনাটি ঘটলো আলিপুরদুয়ার শহরের নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশনে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায়। জানাগেছে এদিন বিহার ভাগলপুর এলাকার বাসিন্দা বছর ২৬ এর নেহা দেবী নামে গর্ভবতী মহিলা জা এর সঙ্গে গৌহাটি থেকে কোয়েম্বাটুর ট্রেনে করে নিজের বাড়ির উদ্যেশে যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল জা এর কোলের সন্তান ও ছোট ভাই। ট্রেনটি নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশন পৌঁছনোর আগেই নেহা দেবী’র প্রসব বেদনা শুরু হয়। কোনো উপায় না বুঝে তারা নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশনে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ বাদেই নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশন থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা। ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তাজনিত খোঁজ নিতে প্লাটফর্মে টহল দিচ্ছিলেন কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মী স্বপ্না দাস। সেই সময় ওই আরপিএফ কর্মী স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে নেহা দেবী’কে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন। নেহা দেবী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চিকিৎসা সহায়তার কথা জানতে পারেন। তড়িঘড়ি তিনি বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু নেহা দেবী’র প্রসব যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেলে, তিনি পাশের ৩ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনের এস-৮ কোচে উঠে বাথরুমে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় সকাল ১১:৪৫ টা নাগাদ বাথরুমের বাইরে তিনি এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর মা এবং নবজাতক শিশু নাড়ি যুক্ত অবস্থায় ট্রেনের কোচে শুয়ে থাকেন। এরপরেই রেলের মিশন মাতৃ শক্তি শুরু হয়। খবর দেয়া হয় রেল হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের। তবে চিকিৎসক আসার আগে মা ও শিশুর সুরক্ষায় রেলের কর্মীরা কোচটিকে ঘিরে ফেলেন। ছুটে আসেন অন্যান্য রেলের আধিকারিকরা।

একপ্রকার নিউ আলিপুরদুয়ার রেলস্টেশনে হৈচৈ পড়ে যায়। প্লাটফর্মে পাশে এম্বুলেন্স ও স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করা হয়। খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপাতালের চিকিৎসকের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহিলা ও শিশুর চিকিৎসা শুরু করেন। সেই সময় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে প্রচুর যাত্রী সেই দৃশ্য দেখবার জন্য ভিড় করা শুসরু করেন। অবশেষে চিকিৎসকরা তাদের প্রক্রিয়া শেষ করে সদ্যজাত শিশু এবং মা’কে নিয়ে ট্রেনের কোচ থেকে বেরিয়ে আসেন। ট্রেন থেকে বেরোতেই প্লাটফর্মে থাকা যাত্রী ও অন্যান্য রেল কর্মীরা করতালির মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানান। নবজাতক শিশু ও মাকে দেখতে ট্রেনের অন্যান্য কোচ থেকে বেরিয়ে আসেন শত শত যাত্রীরা। মা ও শিশুর সহযোগিতায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর রেলের এম্বুলেন্সে করে সদ্যোজাত শিশু এবং মা’কে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় রিলকর্মীরাই। এরপরই তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেন নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সম্পূর্ণ ঘটনায় তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ে থেকে ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। এক সদ্যজাত শিশু এবং মায়ের সহযোগিতায় রেল কর্মীদের ভূমিকা দেখে রেল দপ্তরকে কুর্নিশ জানালেন প্লাটফর্মে থাকা রেল যাত্রীরা।
এরই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপাদতালের চিকিৎসক ডাঃ আশুতোষ সিং জানান, খবর পাওয়া মাত্রই আমরা স্টেশনে এসে পৌঁছই। মা ও শিশু একই নাড়ে অবোধ্য ছিল। আমরা প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসা করেছি। বর্তমানে মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।
এই বিষয়ে ট্রেনের যাত্রী রাহুল কর ও পিংকি বিশ্বাস বলেন, প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কি কারণে ট্রেনটি লেট করছে। সম্পূর্ণ ঘটনা জানবার পর খুব ভালো লাগলো। এক সদ্যোজাত শিশু এবং মা’র পাশে যেভাবে রেল সহযোগিতার হাত বাড়ি দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এমন ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকবো কখনও ভাবিনি।

শেয়ার করুন...

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Live TV

play-sharp-fill

নতুন খবর আবার পড়ুন