শহরের দুর্গোৎসব মানেই আজ বড় বাজেটের থিম, আলো, ভিড়। কিন্তু এই সব কিছুর আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছে শিলিগুড়ির সবচেয়ে পুরনো দুর্গাপুজো—টাউন স্টেশন পূজা। একসময় হাজারো মানুষের মিলনমেলা হলেও আজ তা টিকে থাকার লড়াইয়ে।
১৯১৭ সালে, স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে, শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের রেলকর্মী ও কয়েকজন ইংরেজ সাহেব মিলে শুরু করেছিলেন এই পূজা। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের সহযোগিতায় শুরু হওয়া সেই যাত্রা আজও চললেও পাল্টে গেছে অনেক কিছু। এককালে ভেনাস মোড় ছিল এর কেন্দ্রবিন্দু। টয় ট্রেনে আনা হত প্রতিমা, বিসর্জনের শোভাযাত্রাও যেত খেলনা গাড়িতে। আশপাশের গ্রাম থেকে ভিড় জমাতেন মানুষ, এমনকি ব্রিটিশ অফিসাররাও মেতে উঠতেন আনন্দে। শহরের অন্য পূজাগুলির সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই।

কালের স্রোতে পূজোর আসর সরে এসেছে রেলওয়ে ইনস্টিটিউট কলোনির ভেতরে। নেই টয় ট্রেনের সেই রঙিন দিন, নেই দর্শনার্থীদের ঢল। চমকদার থিমের প্রতিযোগিতায় এখন যেন হারিয়ে যাচ্ছে টাউন স্টেশন পূজা। উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন প্রজন্ম এগিয়ে না আসায় পুজো আয়োজন রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ছে।
২০১৭ সালে শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের পরের বছরই আর্থিক সংকটে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পূজা। পরে রাজ্য সরকারের অনুদান মেলায় ফের প্রাণ ফিরে পায় এই ঐতিহ্য। তবুও সমস্যার শেষ নেই—রেল কোয়ার্টারে আগের মতো মানুষ থাকেন না, ফলে চাঁদা তোলা দুরূহ হয়ে পড়েছে, লোকবলও ক্রমশ কমছে। পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ চিন্ময় ঘোষ জানালেন, “এই পূজা শুধু উৎসব নয়, ইতিহাস। আমার বাবারও অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু মানুষ না থাকলে হয়তো একদিন আমরাও চালিয়ে যেতে পারব না।” তিনিই নয়, শ্যামল নন্দী, রীতা সরকার সহ কয়েকজন প্রবীণ সদস্য প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই পুজো। সম্প্রতি শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব পরিদর্শনে এসে উদ্যোক্তাদের স্থায়ী বেদি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোক্তাদের মতে, কেবল সরকারি অনুদানই যথেষ্ট নয়। এই শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁচাতে চাই মানুষের ভালোবাসা আর নতুন প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ।