মায়ের বয়স ৪৫, মেয়ের ২১। তাতে কী? স্বপ্ন দেখার কি কোনও বয়স হয়? মেয়ের সঙ্গে বিএ পাশ করে সেটাই প্রমাণ করে দেখালেন উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা দে। তা-ও ৭৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে! পরের লক্ষ্য স্নাতকোত্তর। মেয়ের সঙ্গেই সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে চান মা।
৪৫ বছর বয়সে মেয়ের সঙ্গে বিএ পাশ মায়ের! একসঙ্গে এমএ-র গণ্ডিও উতরাতে চান আগরপাড়ার সঙ্গীতা
১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন সঙ্গীতা। সে বার গণিতে অকৃতকার্য হন। তার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। তার পর বিয়ে, সন্তান, ঘরসংসার…।

স্বপ্ন ছিল, স্নাতক হবেন। এত কিছুর মাঝেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।
১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন সঙ্গীতা। সে বার গণিতে অকৃতকার্য হন। তার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। তার পর বিয়ে, সন্তান, ঘরসংসার…। স্বপ্ন ছিল, স্নাতক হবেন। এত কিছুর মাঝেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। ২০১৯ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে আবার মাধ্যমিক দেন সঙ্গীতা, ২৪ বছর পর! পরের ধাপ উচ্চমাধ্যমিক। সে জন্য নতুন করে স্কুলেও ভর্তি হন সঙ্গীতা। ছোট মেয়ে সহেলীও তখন একাদশ শ্রেণিতে। তখন অবশ্য মা-মেয়ের আলাদা স্কুল। মা পড়তেন বেলঘরিয়ার নন্দননগর আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মেয়ে পড়তেন বেলঘরিয়া মহাকালী গার্লস হাইস্কুলে। ২০২২ সালে মেয়ের সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক দেন সঙ্গীতা। মা পান ৪৩৮, মেয়ে ৩৯৭। দু’জনে মিলে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে। সেখানে একে একে ছ’টি সেমিস্টারের গণ্ডি পেরিয়ে বিএ পাশ করেছেন মা-মেয়ে। চূড়ান্ত সেমিস্টারের ফলপ্রকাশ হয়েছে শুক্রবার। দেখা গিয়েছে, একসঙ্গে স্নাতক হয়েছেন দু’জনেই। এ বার মেয়ে পেয়েছেন ৮০ শতাংশ নম্বর, মা ৭৫ শতাংশ!তবে সংসারের বোঝা সামলে আগরপাড়া থেকে রোজ শ্যামবাজারের কলেজে গিয়ে ক্লাস করা সহজ ছিল না। ভোরে উঠে পরিবারের সকলের জন্য রান্না করা, তার পর পাড়ার পাঁচ শিশুকে পড়ানো, কলেজের জন্য তৈরি হওয়া, তার পর নাকেমুখে কিছু গুঁজেই ছুট— গত তিন বছর ধরে এটাই ছিল সঙ্গীতার রোজকার রুটিন। তার উপর সংসার চালানোর জন্য টুকটাক সেলাইয়ের কাজও করেন সঙ্গীতা। এ সবের পাশাপাশি গান এবং নাটকের প্রতি আগ্রহ রয়েছে তাঁর। গান শেখেন, একটি নাটকের দলেও যুক্ত রয়েছেন। বছর ৪৫-এর গৃহবধূর কথায়, ‘‘স্নাতক স্তরের শংসাপত্র হাতে পাব, এটা আমার স্বপ্ন ছিল। এর পর এমএ করার ইচ্ছে রয়েছে। যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই, তা হলেই এমএ করব। তা ছাড়া, একটা চাকরিও দরকার, তা হলে স্বামীকে কিছুটা সাহায্য করতে পারব।’’ স্নাতক স্তরে মেয়ের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে কী বলছেন মা? সঙ্গীতা বলেন, ‘‘সহেলী খুবই বুদ্ধিমতী এবং পরিশ্রমী। ও আমার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে, তাতে আমি খুব খুশি!’’