অবিরাম বর্ষণের ফলে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বিপর্যস্ত হয়েছে। বালাসন, তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক ও সংকোশ নদীর জলস্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মিরিক, দুধিয়া, সুখিয়াপোখরি, নাগরাকাটা, বানারহাট ও রামসাই এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধস নেমেছে, যার ফলে দার্জিলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
দুধিয়ায় লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় দার্জিলিং ও মিরিকের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, উত্তরবঙ্গ পরিবহণ রাজ্য পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় জানান, ইতিমধ্যেই ৬টি বাস জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

রেল যোগাযোগেও বিঘ্ন ঘটেছে। ইতিমধ্যেই তিনটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সূত্রে জানা গেছে, শিলিগুড়ি-ধুবড়ি ডেমু, এনজেপি-আলিপুরদুয়ার পর্যটক স্পেশ্যাল, শিলিগুড়ি-বামনহাট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। কিছু ট্রেন বিন্নাগুড়ি, গুলমার পর্যন্ত সীমিতভাবে চলবে। শিয়ালদহ-আলিপুরদুয়ার এক্সপ্রেস এবং সিকিম-মহানন্দা এক্সপ্রেস ঘুরপথে পরিচালিত হচ্ছে। কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস এবং মহানন্দা এক্সপ্রেসও নিউ কোচবিহার দিয়ে ঘুরিয়ে চালানো হচ্ছে।
পাহাড়জুড়ে অবিরাম বৃষ্টির ফলে একাধিক স্থানে ধস নেমেছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে-১০ (NH-10)-এর বিভিন্ন অংশ ধসের কারণে বন্ধ। এছাড়াও হোম স্টে ও স্থানীয় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দার্জিলিংয়ে নিখোঁজ হয়েছে এক পর্যটক—ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা। তল্লাশি চলছে। ঘটনার স্থলে পৌঁছেছেন জিটিএ’র ডেপুটি চেয়ারম্যান রাজেশ চৌহান, কার্শিয়াং বিডিও কৌশিক চক্রবর্তী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৩০টি ঘর খালি করা হয়েছে এবং কমিউনিটি কিচেন চালু করা হয়েছে।
প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। ভাঙা লোহার সেতুর পাশাপাশি একটি বিকল্প ব্রিজের কাজ চলছে। জিটিএ সভাসদ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে জিটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
নবান্ন থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি দল উত্তরবঙ্গে রওনা হয়েছে। এতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতের সচিব, কৃষি দফরের সচিব, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতের সচিব এবং অন্যান্য উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা রয়েছেন। পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ফোন নম্বরগুলো হল ১০৭০, ৮৬৯৭৯৮১০৭০, ২২১৪৩৫২৬, ২২৫৩৫১৮৫।
এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল শিলিগুড়ি পৌঁছাবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই পাঁচ জেলাশাসকের সঙ্গে আপৎকালীন বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। শিলিগুড়ি-মিরিক রাস্তায় ভাঙা ব্রিজ পরিদর্শন করেছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব ও দার্জিলিংয়ের জেলা প্রশাসক প্রীতি কোয়েল।
উত্তরবঙ্গের এই প্রবল বর্ষণ ও ধসের পরিস্থিতি এখন নজরদারির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে।