শিলিগুড়ি বন্ধুচল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের তৃতীয় বর্ষে “ইচ্ছেডানা ২০২৫” : করিমুল হকের আঙিনায় শিশুদের মুখে উৎসবের হাসি, সমাজে সচেতনতার অঙ্গীকার। নতুন জামা, ভরপেট খাবার, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও এন্টি-ট্রাফিকিং সচেতনতা—আয়োজন ভরিয়ে তুলল করিমুল হকের প্রাঙ্গণ
জলপাইগুড়ির ধোলাবাড়ির রাজাডাঙ্গা গ্রাম। চারপাশে সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রামীণ পরিবেশ। সেই শান্ত আঙিনাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা নামে পরিচিত পদ্মশ্রী করিমুল হকের বাড়ি। দুর্গোৎসবের কয়েকদিন আগেই সেই বাড়ি হয়ে উঠল এক অন্য রকম উৎসবের ঠিকানা। কারণ, এদিন সেখানে অনুষ্ঠিত হলো “ইচ্ছে ডানা ২০২৫”—শিলিগুড়ি বন্ধুচল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের বার্ষিক উদ্যোগ। শুরু থেকেই আকাশে যেন উৎসবের সুর। রঙিন জামাকাপড় হাতে নিয়ে শিশুদের মুখে ফুটে উঠল আনন্দের হাসি। মহিলারা পেলেন স্যানিটারি ন্যাপকিন ও সাজসজ্জার সামগ্রী। দুপুরে ছোট্ট ছোট্ট টেবিলে বসে সবাই মিলে খেল ভরপেট খাবার। একটা গ্রামের প্রাঙ্গণ যেন এক মুহূর্তে বদলে গেল আনন্দের মেলায়।

কিন্তু এই আয়োজন কেবল উৎসবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তুলে ধরতেই আয়োজন করা হয়েছিল বিনামূল্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। শহরের খ্যাতনামা চিকিৎসকরা এদিন চক্ষু, দাঁত, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা সমস্যার পরীক্ষা করেন। রোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিনামূল্যে ওষুধ। শুধু তাই নয়, চা-বাগান এলাকায় বেড়ে চলা পাচার চক্র রুখতে বিশেষ এন্টি-ট্রাফিকিং সচেতনতা শিবিরও আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয়দের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানে ছিলেন বন্ধুচল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা ঋত্বিক ভট্টাচার্য, সভাপতি সৃজা সরকার, সহ-সভাপতি ডলি বর্মন ও কোষাধ্যক্ষ রোহিত ঘোষ। পাশাপাশি যোগ দেন আজমি কেয়ার-এর শাকিব খান, বেটার টুমোরো ফাউন্ডেশন-এর চিরঞ্জিব চ্যাটার্জীসহ শহরের একাধিক বিশিষ্টজন। তাদের উপস্থিতি এই আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
সভাপতি সৃজা সরকারের কথায়, “ইচ্ছে ডানা কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজের প্রতি অঙ্গীকার। আমরা চাই উৎসবের আনন্দ যেন কেবল শহরে সীমাবদ্ধ না থাকে, পৌঁছে যাক প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিটি ঘরে। আগামী দিনে আমরা এই কর্মসূচিকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই।” পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন করিমুল হক। মৃদু হেসে বললেন, “গত তিন বছর ধরে আমার বাড়িতে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এত বড় উদ্যোগ দেখে আমি ভীষণ গর্বিত। চাইব আগামী দিনে আরও বেশি তরুণ এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসুক।” গ্রামের বাতাসে মিশে ছিল উৎসব, সেবা আর সচেতনতার এক অনন্য মিশেল। এক দিনের এই অনুষ্ঠান যেন বলে দিল—পূজা কেবল মণ্ডপসজ্জা বা আলো-ঝলকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়াই আসল উৎসব।