একটা সময় ছিল, শিলিগুড়ি শহরের বুক চিরে পাহাড়ের দিকে বেয়ে উঠত সরু লাইন — আঁকাবাঁকা পথ, শিসের শব্দ, আর ধোঁয়ার সাদা মেঘে ভাসা ছোট্ট টয় ট্রেন। ১৮৮১ সালের ৪ঠা জুলাই প্রথম সেই ট্রেন ছুটেছিল পাহাড় ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেই ট্রেন আজও বেঁচে আছে পাহাড়ি জনপদের গল্প হয়ে, ছবির মতো দৃশ্য হয়ে। তবে এত বছর পেরিয়ে গেলেও ট্রেনটার নিজস্ব কোনো দিন ছিল না। এবারই প্রথম, শুকনা স্টেশনে সকাল হতেই জমে উঠল রঙ আর মানুষের ভিড়। নর্থ বেঙ্গল পেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আর দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে মিলে ঠিক করল — টয় ট্রেনকে এবার উৎসবের রঙে রাঙানো হবে।

সকালে ছোট ছোট হাতে রঙ আর তুলি ধরা, শতাধিক ছেলে-মেয়ে মেঝেতে বসে কাগজে কাগজে টেনে আনল টয় ট্রেনের ছবি। কেউ পাহাড় আঁকল, কেউ ঝিকঝিক শব্দের রেখা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল শিশুদের হাসি, তুলির টানে ফিরে এল পুরনো দিনের ট্রেনযাত্রা। স্টেশনের একপাশে রাখা ছিল একখানা আসল টয় ট্রেন — নতুন সাজে, ধোঁয়া ছাড়ছে না ঠিকই, তবু মানুষের মনে ছুটছে সেই আগের মতোই। কেউ ফটো তুলল, কেউ ট্রেনের সিঁড়িতে চেপে বসল, কেউ শুধু দূর থেকে দেখল আর ভাবল — একদিন সেই ট্রেনে চেপে পাহাড়ে যাবে! চন্দন কুমার রায়, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, স্টেশন ম্যানেজার আর শিল্পীর দল — সবাই মিলে দাঁড়িয়ে থাকলেন শিশুদের সাথে, ছবি দেখলেন, হাততালি দিলেন, উৎসাহ দিলেন নতুনদের। (চন্দন কুমার রায়)
শেষমেশ উদ্যোক্তারা বলেই দিলেন — এই আনন্দ শুধু এক বছরের নয়, এবার থেকে প্রতি বছরই ৪ঠা জুলাই হবে টয় ট্রেন দিবস। পাহাড় আর ট্রেনের গল্প, শিশুদের রঙ আর মানুষের স্মৃতিতে বাঁচবে আরও একশো বছর।