দেশজুড়ে যখন স্বাধীনতার রঙে রাঙানোর প্রস্তুতি তুঙ্গে, তখন হাওড়ার এক অখ্যাত গলিতে দিন-রাত চলছে জাতীয় পতাকার নির্মাণ। জায়গাটির নাম উনসানি, জগাছা। এখানকার একটি ছোট কারখানাই বছরের পর বছর সরবরাহ করে আসছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য পতাকা।
এখানকার কারখানাগুলোতে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, এই কারিগরিতে শুধু রঙ বা কাপড়ের মেলবন্ধন নেই আছে সম্প্রীতির বার্তা। হিন্দু-মুসলমান কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই সুঁই-সুতয় গেঁথে তুলছেন জাতীয় পতাকার তেরঙা।
এক কারখানার মালিক রাজু হালদার জানালেন,“বাপ-ঠাকুরদার সময় থেকে এই কাজ করছি। এবছরও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরা এমনকি ভিনরাজ্যেও ট্রেনে করে যাচ্ছে আমাদের পতাকা। কাজের চাপ এত বেশি যে রাত-দিন কাজ চলছে।”

এই মুহূর্তে এখানে প্রায় ৩০-৩২ জন কর্মী লাগাতার কাজ করছেন। শুধু এই কারখানাই নয়, আশপাশের আরও কয়েকটি দোকানও পতাকা তৈরির কাজে যুক্ত। শেখ সরিফুল, যিনি এই কারখানার অন্যতম দক্ষ কারিগর, বললেন,“অর্ডারের পাহাড় জমেছে। স্কুল, অফিস, ক্লাব সব জায়গায় পতাকা পৌঁছে দিতে হবে। তাই এখন বিশ্রামের সুযোগ নেই।”
এখানে তৈরি হচ্ছে নানা আকারের পতাকা ছোট হাতে ধরা পতাকা থেকে শুরু করে স্কুলের ছাদ বা রাস্তার আলোর খুঁটিতে বাঁধা বড় পতাকা পর্যন্ত। আকারভেদে দামও আলাদা।
প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। স্কুল থেকে সরকারি অনুষ্ঠান, সর্বত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলনের রীতি। আর সেসব অনুষ্ঠানের মঞ্চে, স্কুলের মাঠে, কিংবা সাধারণ মানুষের হাতে যে তেরঙা উড়বে, তার অনেকগুলিই আসছে হাওড়ার এই উনসানির গলি থেকে।
এখানকার কারিগরদের হাতে তৈরি প্রতিটি পতাকা যেন স্বাধীনতার প্রতীক হওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সম্প্রীতিরও এক উজ্জ্বল নিদর্শন।