কোচবিহার জেলার দিনহাটার উত্তম কুমার ব্রজবাসী, জেলার মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের লতাপাতা গ্রামের নিশিকান্ত দাস, তুফানগঞ্জ ২ নং ব্লকের শালবাড়ি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশ রাজা গ্রামের বাসিন্দা মমিনা বিবি-র পর এবার আসাম সরকারের এনআরসির নোটিশ পেলেন কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকের রামপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দক্ষিণ রামপুর গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার। ফরেনার্স ট্রাইবুনাল- কামরূপ (এম) গুয়াহাটি আসাম থেকে ২বার এনআরসি নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাকে, ২০২৪ সালে যে এনআরসি নোটিশ জারি করা হয়েছে, তার এফটি কেস নম্বর- 1718/2015, রেফারেন্স নম্বর – 828/14/DCP(B)। আর ২০২৫ সালে যে এনআরসি নোটিশ জারি হয়েছে তার এফটি কেস নম্বর- 1719/2015, রেফারেন্স নম্বর – 828/14/DCP(B)।

শুক্রবার দীপঙ্কর সরকার জানান, প্রায় তিন বছর আগে আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি এই কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকের রামপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দক্ষিণ রামপুর গ্রামের নিজের জন্মভিটায়। বর্তমানে এখানেই রয়েছেন তিনি। আধার কার্ড রয়েছে তার, রয়েছে ভোটার কার্ডও।প্রতিটি নির্বাচনে নিয়ম করে ভোটও দেন তিনি। তিনি জানান, তার বাবা, কাকাও জন্মসূত্রে এই দক্ষিণ রামপুর গ্রামেরই বাসিন্দা এরপরেও কেন আসাম সরকার তাকে এই নোটিশ পাঠিয়েছে, তা বুঝতে পারছেন না তিনি।
দীপঙ্কর সরকার জানান, ২০২৫সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম তার কাছে এসে পৌঁছোয় এই নোটিশ। এরপর আবারও তার কাছে এই নোটিশ আসে ২০২৫সালের মার্চ মাসে। বিষয়টি গোপনই রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এই তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকেরই শালবাড়ি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশরাজা এলাকার বাসিন্দা মমিনা বিবি-র নামে জারি হওয়া এনআরসি নোটিশ প্রকাশ্যে আসার পরই তিনি বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। এই নোটিশ আসার পর রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে রয়েছেন তিনি বলে এদিন জানান।
দীপঙ্কর সরকারের কাকা বলরাম সরকার এদিন জানান, তার ভাইপোর এই এনআরসির নোটিশ আসায় আতঙ্কিত তারা। তারাই রামপুর এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা কিন্তু তারপরও কেন এনআরসির নোটিশ পাঠানো হলো তার ভাইপোকে তা নিয়ে রীতিমতো উৎকণ্ঠে রয়েছেন তারা বলে এদিন জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে রামপুর ২ নং অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি পার্থ দত্ত বলেন, পশ্চিমবাংলার বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে হেনস্থা করার জন্য আসাম সরকার এই সমস্ত কর্মকাণ্ড করছে যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। একের পর এক বাংলার মানুষের কাছে এই এনআরসি নোটিশ ভাষায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষেরা এবং আতঙ্কগ্রস্ত এনআরসির নোটিশ পাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও। এ ব্যাপারে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে তৃণমূল কংগ্রেস বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা উৎপল দাস বলেন, এই দীপঙ্কর সরকার সহ আরও যাদের এনআরসির নোটিশ এসেছে, তারা ভালো করেই জানেন কেন তাদের এই নোটিশ এসেছে। এই দীপঙ্কর সরকার দীর্ঘদিন আসামে কাজ করতেন এবং বসবাস করতেন। পরবর্তীতে আসামের পল্টন বাজার থানায় তাকে ডেকে পাঠানো হয় এবং পল্টন বাজার থানায় তিনি হলফনামা দিয়ে আসেন। এই হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতেই তার কাছে এই এনআরসির নোটিশ এসেছে। প্রায় ১৫দিন আগে তিনি প্রয়োজনীয় নথি আসামে জমা করে এসেছেন। তারপরেও তৃণমূল এটাকে নিয়ে রাজনীতি করছে, বাংলার মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে যে বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে বাঙালীদের তাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আসলে এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে ভোটের রাজনীতি করতে চাইছে তৃণমূল। এসব করে তৃণমূলের কোন লাভ হবে না। কারণ মানুষ বুঝতে পেরে গেছে, যাদের আসাম থেকে এনআরসির নোটিশ আসছে, তাদের কোন না কোন ভাবে আসাম রাজ্যের সাথে যোগাযোগ ছিল।
এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক .