এনআরসির গেরোয় দিনহাটার সীমান্ত গ্রামের এক বাসিন্দা। বংশ-পরম্পরায় দিনহাটায় থাকলেও ৫০বছর বয়সেও কোচবিহারের বাইরে যাননি অথচ আসাম সরকারের পক্ষ থেকে দিনহাটার চৌধুরীহাটের সাদিয়ালের কুঠি এলাকার উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে পাঠানো হয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশের নোটিশ। চলতি মাসের ১৫ই জুলাই এর মধ্যে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তাকে অনুপ্রবেশকারি হিসাবে চিহ্নিত করা হবে বলেও উত্তমের কাছে পাঠানো নোটিশে উল্লেখ রয়েছে।
এই বিষয়ে উত্তম কুমার ব্রজবাসী নামের ওই ব্যক্তি জানান যে গত জানুয়ারি মাসে পুলিশ প্রশাসন মারফত তার বাড়িতে একটি NRC সংক্রান্ত চিঠি আসে। এরপর তিনি প্রতিবেশীদের সেই চিঠিটি দেখালে জানতে পারেন যে আসাম সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে নোটিশটি পাঠিয়েছেন। এবং সেই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে তিনি নাকি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে অবৈধভাবে অসম সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রবেশ করেছেন এবং দিনহাটা মহকুমা চৌধুরীহাট গ্রাম পঞ্চায়েত এর সাদিয়ালের কুঠিতে বসবাস করছেন। এছাড়াও নোটিশটিতে আরও উল্লেখ রয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনে তিনি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তাই তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উত্তম কুমার ব্রজবাসীর আইনজীবী অপূর্ব সিনহা বলেন – “এনআরসি সংক্রান্ত এই কেস টি অসম সরকার ২০১৫ সালে শুরু করে কিন্তু সেই চিঠি ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে পৌঁছায়। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তম কুমার ব্রজবাসী সেই এনআরসি সংক্রান্ত চিঠিটি পান। আইনজীবী অপূর্ব সিনহা আরও অভিযোগ করে বলেন যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এনআরসি কে মান্যতা দিচ্ছে না, সেখানে প্রতিবেশী অসম রাজ্যের এনআরসি সংক্রান্ত চিঠি কি করে জেলা পুলিশ সুপার রিসিভ করেন! তার আরও অভিযোগ তার মক্কেল কে বৈধ ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার জন্য তারা ইতিমধ্যে যে সমস্ত কাগজপত্র পেশ করেছে আসাম সরকার সেগুলি বেশিরভাগই নাকচ করে দিয়েছে। এখন আসাম সরকার দাবি করছে ১৯৬৬ সাল থেকে কন্টিনিউ ভোটার লিস্টের তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম আছে কিনা। কিন্তু জেলা প্রশাসন এমনকি রাজ্য প্রশাসনও ১৯৬৬ সালের পর থেকে ভোটার তালিকা দিতে পারছে না। অপূর্ব সিনহার কথায় চলতি মাসের ১৫ তারিখে কাগজপত্র জমার শেষ তারিখ রয়েছে এর মধ্যে কাগজপত্র যদি রাজ্য সরকার দিতে না পারে তাহলে তার মক্কেল কে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন উত্তম কুমার ব্রজবাসি শুধু ভারতীয় নাগরিক নন তিনি তপশিলি তালিকাভুক্ত নাগরিক। পাশাপাশি তিনি আরো চ্যালেঞ্জ করেন কামরূপ জেলার এসপি কোন সাহসে কোচবিহারের দিনহাটার নাগরিককে এনআরসি সংক্রান্ত চিঠি পাঠায়। আরও বলেন কিভাবে এখানকার নাগরিককে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে পুশব্যাক করে সেটা দেখব। পাশাপাশি এই ব্যাপার নিয়ে যতটা শোরগোল করা দরকার সেটা করব এবং উত্তম কুমার ব্রজবাসির বাড়িতে গিয়ে সমস্ত বিষয়টা খোঁজখবর নেবো।
এই প্রসঙ্গে মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক সুশীল বর্মনের দিন বলেন। এখানকার একজন ভোটারের নামে যদি নোটিশ আসে, রাজ্য সরকার কি করছে? আসলে কি বাঙালীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, নাকি বিজেপির নামে কলঙ্ক রটানো হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে শরনার্থী হয়ে এখানে এসেছেন ধর্ম সংকটে পড়ে, তাদের বিজেপি কখনোই তাড়াবেনা, যারা অনুপ্রবেশকারী তাদেরকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।