দিন কয়েক বাদেই মাতৃপক্ষের বন্দনা শুরু। মায়ের আরাধনায় গোটা রাজ্যজুড়ে হইহই করে প্রস্ততি চলছে। কিন্তু তুফানগঞ্জে একের পর এক মহিলাদের উপর নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় মায়ের আবাহনকে যেন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। শুক্রবারই দেওচড়াইয়ে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে এক গৃহবধুকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার ভোররাতে কৃষ্ণপুর এলাকায় পণের দাবিতে এক অন্তঃসত্ত্বাকে খুন করে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।যদিও খুনের ঘটনা অস্বীকার করেছেন মৃতার স্বশুর বাড়ির লোকজন।বারবার এধরণের ঘটনায় তুফানগঞ্জ তো বটেই সর্বত্রই নিন্দার ঝড় উঠেছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন সকলেই।

অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন পর মোটরসাইকেল কেনার জন্য স্ত্রীর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে স্বামী। দাবি মত টাকা দিতে না পারায় অন্তঃসত্ত্বা বধুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতে বলে অভিযোগ।
শনিবার ভোররাতে বধূকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ। খুনের পর দেহ ঘরে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা প্রমাণের চেষ্টা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মাম্পি খাতুন (২০)। দেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য কোচবিহার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতের বাপের বাড়ির তরফে তাঁর স্বামী সহ শশুরবাড়ির বিরুদ্ধে তুফানগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশে অভিযোগ দায়ের হতেই গা-ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির সকলে।
শনিবার ভোর রাতে তুফানগঞ্জ থানার অন্তর্গত দেওচরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর এলাকার ঘটনা।
বছর খানেক আগে আগে ভানুকুমারীর বাসিন্দা মাম্পির সাথে সামাজিক নিয়মে বিয়ে হয় দেওচরাই গ্রাম পঞ্চায়েতে কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা জহিরুল হকের। বিয়ের সময় কোনওরকম পণ নিতে সাফ মানা করেন ছেলের বাড়ির পরিবার। তবুও সাধ্যমত বিয়ের সময় মেয়ের কানের, ছেলের আংটি এছাড়া ঘর সাজানোর সবরকম আসবাবপত্র বিয়েতে জামাইকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিয়ের ঠিক একমাস পরেই স্ত্রীর কাছে মোটরবাইক কেনার জন্য ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দাবি করে স্বামী। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় বধুকে মারধর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়িতে। মেয়ের কথা ভেবে বাধ্য হয়ে ঋণ,ধার করে দেড় লক্ষ টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেন বাবা। এদিকে, সেই ঋণ শোধ করতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন বাবা। তিন মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে মেয়ে। শুক্রবার রাতে বাইক কেনার বাকি টাকার জন্য গর্ভবতী অবস্থাতেও বধূকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালায় স্বামী সহ শশুরবাড়ির লোকজন। ফাঁকে চুপ করে মারধরের গোটা ঘটনা ফোন করে মাকে জানায় সে। এরইমধ্যে শনিবার ভোররাতে প্রতিবেশীর কাছে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সপরিবারে ছুটে আসেন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। গোটা ঘটনায় খবর দেওয়া হয় তুফানগঞ্জ থানায়।এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছে শোবার ঘর থেকে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।