স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। চারটি শ্রেণীকক্ষ থাকলেও একটি স্কুলে পড়ুয়াদের যে সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সিকিঅংশও নেই। স্কুলে নেই পরিশ্রুত পানীয় জল, নেই সীমানা প্রাচীর, এমনকি নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষকও। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থায় ধুঁকছে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের শালবাড়ি -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বিতীয় খন্ড বাঁশরাজা বিশেষ পর্যায় প্রাথমিক স্কুল। এই স্কুলে একজন শিক্ষক প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস নেন। আইন অনুসারে বিনামূল্য শিক্ষা সবারই প্রাপ্য। তবে সেই শিক্ষা দিতে গিয়ে প্রয়োজন শিক্ষকে। যদি স্কুলের শিক্ষক না থাকে তবে সরকারের এই আইন রেখে কোনও লাভ হচ্ছে কি? প্রশ্ন স্থানীয় অভিভাবকদের।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ -তে এই দ্বিতীয় খন্ড বাঁশরাজা বিশেষ পর্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তৈরি হয়। এই স্কুলে শুরু থেকে তিনজন শিক্ষক ছিলেন। সেই সময় স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৩০ জন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে একজন শিক্ষিক অবসর গ্রহণ করেন। গত জানুয়ারি মাসে অপর একজন শিক্ষক বদলি হয়ে যান অন্যত্র। তখন প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে গোটা স্কুল।

স্কুলে মিড-ডে মিলের ডাইনিং শেড না থাকার ফলে দিনের পর দিন কখনও বারান্দায় আবার কখনও মাঠে বসে পড়ুয়াদের খাবার খেতে হচ্ছে যার ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের। স্কুলটিতে উন্নয়নে প্রশাসনের নজর না পড়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। স্কুলে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকার ফলে বাধ্য হয়ে গভির নলকূপের আয়রন যুক্ত জল পান করতে হয় পড়ুয়াদের আর এই জল দিয়েই চলে মিড-ডে মিলের রান্না। ফলে পড়ুয়াদের পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্কুলের প্রাচীর না থাকায় স্কুল চত্বরে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে ফলে মাঝে মাঝে বাইরে থেকে বহিরাগতরা এসে স্কুলের শৌচাগার নোংরা করে চলে যায় বলে অভিযোগ। এমনকি সমাজবিরোধীদের আড্ডার জায়গায় পরিণত হয়েছে স্কুলটি।
অভিভাবকদের আরো দাবি,প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা। তাই অনেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে সরিয়ে প্রায় ৫ কিমি দূরে অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন।একজন শিক্ষক চারটি শ্রেণির ক্লাস নেওয়ায় যেমন পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ তেমনই কচিকাঁচাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরা । দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়ারা পড়াশোনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই স্কুলের স্থায়ী শিক্ষক আসুক।
যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার সাহা শিক্ষকের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন,একার পক্ষে পড়ুয়াদের সামলানো যথেষ্ট কষ্টকর।কমপক্ষে আরও দুজন শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। পরিকাঠামোর উন্নতি এমনকি আরও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে তুফানগঞ্জ-২ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের এক আধিকারি বলেন, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি উপরমহলে জানানো হয়েছে। স্কুলের অন্য সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।