তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে আবারও সামনে এলো তৃণমূলের আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব। কোচবিহার শহরের দেশবন্ধু মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজেদের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের আবরণ উন্মোচন করলেন দলের নেতারাই।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এর হাত ধরেই তার রাজনীতিতে আসা। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এর সাথে খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা গত দেড় বছর ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই দূরত্বকে ঘুঁচিয়ে নেত্রীর কথাকে মান্যতা দিয়ে আবারও কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করতে চাই। কিন্তু এই কাছাকাছি আসাটাকে কেউ কেউ অন্যভাবে কেন ব্যাখ্যা করছেন, তা তার উপলব্ধি হচ্ছে না।

পার্থ প্রতিম রায় বলেন, রবিবাবু আমাদের দলের কোচবিহার জেলার মূল স্তম্ভ। তাকে সামনে রেখে বাকি জেলা নেতৃত্বদের সামনে রেখে আমরা লড়াইটা করব। তিনি আরও বলেন, তাকে বাদ দিয়ে বা কোন কর্মসূচিতে তাকে সামনে না রেখে যদি লড়াই করতে যাই, তাহলে কোথাও একটা ভুল হবে। আমরা এই ভুল করতে চাই না।
অন্যদিকে, এই মঞ্চে দাঁড়িয়েই তৃণমূল কিষাণ মজদূর ইউনিয়নের কোচবিহার জেলা সভাপতি খোকন মিঞা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, ১৯৯৮সালের লড়াইয়ে যারা ছিলেন তারাই আসল তৃণমূল কংগ্রেস। বাকিরা বসন্তের কোকিল। তিনি বলেন বসন্তের কোকিল বলতে তাদের কি বোঝানো হয়েছে যারা ভালো সময় থাকবেন এবং খারাপ সময়ে চলে যাবেন।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, দলের পুরনো যারা অভিমান, রাগ কিংবা গোঁসা করে বসে রয়েছেন, তারা এগিয়ে আসুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী করুন। আগামী ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলা থেকে নয়টি বিধানসভা আসনই উপহার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে। তিনি এদিন বলেন এই দলটা কারও ব্যক্তিগত দল নয় তৃণমূল স্তর থেকে যারা রয়েছেন সবারই অধিকার রয়েছে এই দলে।

অন্যদিকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি পরিমল বর্মনের দিন বলেন না করলে দলকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয় তাই সব বংশের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করছেন তারা তিনি আরো বলেন যারা তৃণমূলের জন্ম লগ্নে ছিলেন না, তারা জন্মলগের নেতৃত্বদের বাদ দিয়ে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করছেন! এটা কখনওই কাম্য নয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই মুহূর্তে কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের সামনের সারিতে যারা রয়েছেন তারা প্রায় কেউই তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকে দলের সাথে ছিলেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক ২০১৩ সালের পর তৃণমূলে যোগদান করেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক তথা এই ফরওয়ার্ড ব্লক দলের কোচবিহার জেলার সর্বময়কর্তা। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। একইভাবে কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়াও এক সময় ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা। আর অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, খোকন মিয়া কিংবা পরিমল বর্মন এরা প্রায় সকলেই রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকেই। পার্থ প্রতিম রায়ও কোচবিহার জেলায় তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকেই। অথচ এই মুহূর্তে দলের রাশ এই পুরনোদের হাতে না থাকায় দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে তৃণমূলে।